লুইস এসিড(Lewis acid) কী? কি কি কাজে লুইস এসিড ব্যবহার করা হয়


যে সকল এসিড অন্য জায়গা থেকে ইলেকট্রন জোড় গ্রহণ করতে পারে, তাদের লুইস এসিড(AlCl3- Lewis Acid) বলে। অন্যভাবে বলা যায়, যে সব এসিডের যোজ্যতা স্তরে ৬ টি ইলেকট্রন থাকে, তাদের লুইস এসিড বলে। সাধারণত কক্ষপথ ফাকা থাকা বা নিঃসঙ্গ মুক্ত জোড় ইলেক্ট্রন থাকা এবং ফাকা যায়গায়  ইলেকট্রন গ্রহন করার ক্ষমতা দেখেই লুইস এসিড চেনা যায়। 


লুইস এসিড সব সময় শুধু ইলেকট্রন গ্রহণই করে, কখনো দান করে না। এলুমিনিয়াম ক্লোরাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাই, হাইড্রোক্লোরিক এসিড, বোরন ট্রাই ক্লোরাইড ইত্যাদি লুইস এসিডের উদাহরণ। অন্যান্য সাধারণ রাসায়নিক উপাদান হতে লুইস এসিড কিছুটা ভিন্নধর্মী। লুইস এসিড ধনাত্মক আয়নযুক্ত।

 

রসায়নবিদ জি এন লুইস ১৯২৩ সালে সর্বপ্রথম লুইস এসিডের ধারণা দেন। পরবর্তীতে উনার নাম অনুসারেই এসিডটির নাম লুইস এসিড করা হয়।

 

লুইস এসিড এবং বেস গুলোর মধ্যে সাধারণত তীব্রতা ও কোমলতার উপর নির্ভর করে শ্রেণিবিভাগ করা হয়। এই ক্ষেত্রে তীব্র শ্রেণিতে থাকে ছোট ও নন পোলারাইজড পরমাণু সমূহ। যেমন, হাইড্রোজেন বা জিংক ইত্যাদির এসিড। এবং কোমল শ্রেণিতে থাকে অপেক্ষাকৃত বড় ও পোলারাইজড পরমাণু সমূহ যেমন, আর্গন, নাইট্রেট ইত্যাদির এসিড ।

 

রাসায়নিক পরীক্ষাগারে লুইস এসিডের ব্যবহার:

রাসায়নিক পরীক্ষাগারে ফ্রিডেল ক্রাফট বিক্রিয়ায় লুইস এসিড একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যক প্রভাবক হিসেবে কাজ করে। জৈব রসায়নে লুইস এসিড প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন ক্যাটায়নিক ও স্যুডো ক্যাটায়নিক বিক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক উপাদান সমূহের অম্লতা ও বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করতে রাসায়নিক পরীক্ষাগারে লুইস এসিডের ব্যবহার করা হয়।

 

কৃষি ক্ষেত্রে লুইস এসিডের ব্যবহার:

সরাসরি সক্রিয় উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত না হলেও ফসলের জমিতে ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন রাসায়নিক সার তৈরীর প্রক্রিয়ায় লুইস এসিড গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হিসাবে ব্যবহার করা হয় । বিশেষ করে নাইট্রোজেন এর সার তৈরির প্রক্রিয়ায় লুইস এসিডের ব্যবহার আবশ্যক। সারে অম্লতার ভারসাম্য রক্ষা করতেও লুইস এসিড কাজে লাগে।

 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে লুইস এসিডের ব্যবহার:

চিকিৎসা ক্ষেত্রে লুইস এসিডের সরাসরি সক্রিয় ভাবে ব্যবহার না থাকলেও বিভিন্ন ওষুধের তৈরি প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক উপাদান হিসেবে এটি ব্যবহার করা হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রসায়নবিদরা ইতোমধ্যে এমন একটি নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যে পদ্ধতিতে ভিন্ন ভিন্ন মৌলের ও ভিন্ন ভিন্ন মাত্রার লুইস এসিড ও সাথে উন্নত টেকনোলজি ব্যবহার করে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহার হয় এমন বিভিন্ন ওষুধ ও রাসায়নিক উপাদানের বিশুদ্ধতা পরীক্ষা, এবং কম খরচে অধিক পরিমাণে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা বৃদ্ধি করা যায়।

 

 

শিল্প কারখানায় লুইস এসিডের ব্যবহার:

শিল্প কারখানায় লুইস এসিড ব্যবহার শুধুমাত্র স্টিল মিল বা লোহার কারখানা গুলোতেই পাওয়া যায়। লোহা তৈরিতে ও প্রক্রিয়াজাত করণে আবশ্যকীয় চেলেটিং এজেন্ট বানাতে স্টিল মিলে লুইস এসিডের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার লক্ষ করা যায়।

 

সাবধানতা:

পৃথিবীতে পাওয়া যায় এমন যে কোন রাসায়নিক উপাদানই ব্যবহারের সময় অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। অন্যথায় ছোট বড় যে কোন ধরনের বিপদ হতে পারে। লুইস এসিড যেহেতু খাদ্য উপযোগী হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি, তাই এটি কোনভাবেই মুখে চলে যাওয়া থেকে বিরত রাখাই উত্তম। 


আর ইতোমধ্যে বোঝা গেছে যে, লুইস এসিড মানব জীবনের নিত্য ব্যবহার্য কোন উপাদান নয়। এমনকি নিত্য ব্যবহার্য বা গৃহস্থালি কাজে ব্যবহৃত কোন পন্যেও এটি সক্রিয় ভাবে ব্যবহার করা হয় নি। এটি শুধুমাত্র রাসায়নিক ও শিল্প কারখানা গুলীতেই অভিজ্ঞদের তত্বাবধানে ব্যবহৃত হওয়া একটি উপাদান। সুতরাং, ব্যক্তিগত ভাবে উৎসাহি হয়ে এই লুইস এসিড নিজের ঘরে, কোন মানুষের সংস্পর্শে, বিশেষ করে শিশুদের সংস্পর্শে না আনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। 

Recent Post