ক্যামিক্যাল ব্যবসা করতে টাকা লাগে ?

গার্মেন্টস শিল্পে নানা ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশী কেমিক্যাল ব্যবহার হয় ডাইং সেকশনে কাপড় রং করার কাজে। কেমিক্যাল ব্যবসায় লাভের পরিমান বেশ ভাল। এ জাতীয় ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে বেশীরভাগ মানুষের ধারণা না থাকায় প্রতিযোগীতাও তুলনামুলক কম। তো চলুন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন ধরণের কেমিক্যাল ও এর ব্যবহার সম্পর্কে।


১. সোডা :
কালার ফিক্সং করে কোভেলেন্ট বন্ড তৈরি করে তাছাড়া পিএইচ কন্ট্রোল , ফেব্রিকের এবজরবেন্সি বাড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হয়।

২.পার-অক্সাইড :
ফেব্রিকের মধ্যে থাকা ন্যাচারাল গ্রে কালার রিমুভ করতে ব্যবহার করা হয় ।

৩.স্টেবিলাইজার :
পার-অক্সাডের রিয়েকশন স্টেবল করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ব্যাবহার না করললে পার অক্সাইড খুব দ্রুত ভেংগে পার হাইড্রো অক্সিল আয়ন গুলি শেষ করে ফেলবে যা ব্লিচিং এর জন্য দায়ী।

৪.ডিটারজেন্ট :
ওয়েটিং অথবা ক্লিনিং এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করা হয়।

৫.এন্টিক্রিজিং এজেন্ট:
নিটিং এর পর ওয়েট প্রসেসিং এর সময় ফেব্রিকে ভাজ অথবা ক্রিজ পরে ফলে সেড আন-ইভেন আসতে পারে ডাইং এর সময়। তাই তা দুর করতে এক ধরনের ক্রিজ রিমুভার ব্যবহার করা হয় যেন ক্রিজ না পরে। এটি লুব্রিকেশন টাইপ এর ক্যামিকেল।

৬.সিকুস্টারিং এজেন্ট:
পানির মধ্যে থাকা মেটাল আয়ন, হার্ডনেস রিমুভ করতে এবং পানিকে সফট করতে ব্যবহার করা হয় ।

৭.ওয়েটিং এজেন্ট :
সারফেস টেনশন দুর করে ফেব্রিকের ভিজানোর ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ব্যবহাত করা হয়। এটি ওয়েটিং প্রপার্টি ইম্প্রুভ করে।

৮. রিডাকশন এজেন্ট:
ফেব্রিকের সারফেসে লেগে থাকা এক্সট্রা ডাইস দুর করার জন্য ব্যবহার করা হয় ।

৯.সোপিং এজেন্ট:
অতিরিক্ত কালার দুর করার জন্য ফেব্রিক ওয়াস করার সময় ব্যবহার করা হয়।এটি লিকুইড সোপ।

১০.এনজাইম :
ফেব্রিকের হেয়ারিনেস দুর করতে সফট করতে ব্যবহার করা হয়। এনজাইম পিলিং দুর করে।

১১.এন্টিফোমিং এজেন্ট:
ডাই বাথে যেন ফোম ক্রিয়েট না হয় তা দুর করতে ব্যবহার করা হয় । লিকারে যেনো ফোম না হয় এর জন্য এই ক্যামিকেল ব্যাবহার হয়।

১২.সফটনার :
ফেব্রিকের সারফেস লাসচার বাড়াতে এবং ফেব্রিক সফট করতে সাধারনত এটি ব্যাবহার করা হয়। এটি ফেব্রিক এর হেন্ডফিল এবং সুইয়িবিলিটি বাড়ায়।

১৩.হইড্রোজ :
ফেব্রিকের গা থেকে কালার তুলতে ব্যবাহার করা স্ট্রিপিং এর সময়। একে রিডিউসিং এজেন্ট বলে।

১৪.লেভেলিং এজেন্ট:
ফেব্রিকের মধ্যে সম-ভাবে ডাইস কেমিক্যাল সমানভাবে যেন ডিস্ট্রিবিউশন হয় তার জন্য ব্যবহার করা হয়। একে ডাই রিটেন্ডারিং এজেন্ট বলে।

১৫.লবন:
ইলেকট্রো লাইট অর্থাৎ ফেব্রিকের সারফেসে , ডাই-বাথ থেকে ডাইজ আনতে হেল্প করে । চার্জ নিউট্রাল করে।

১৬.ফিক্সিং এজেন্ট:
কালার ফিক্স করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

১৭.O.B.A:
অপটিক্যাল ব্রাইটেনার ফেব্রিকের ব্রাইটনেস, হোয়াইটনেস বাড়াতে ব্যবহার করা হয়।

১৮.হাইড্রোজ রিমুভার:
হাইড্রোসের কর্মক্ষতা দুর্বল করতে ব্যবহার করা হয় ।

১৯.এসিটিক এসিড:
ফেব্রিককে নিউট্রাল করতে, বেসিক কন্ডিশন দুর করতে এবং পিএইচ কন্ট্রোল করতে ব্যবহার করা হয়। এটি টেক্সটাইল এ সর্বাধিক ব্যাবহৃত এসিড

২০.ডিস্পারসিং এজেন্ট:
পলিএস্টার ফেব্রিকে ডাইজ যেন সমভাবে প্রবেশ করে তার জন্য ব্যবহার করা হয় । এটি পলিস্টার এর লেভেলিং ও বলা যায়।

২১.সোডিয়াম এসিটেট:
পলিস্টার ডাইং এর সময় পিএইচ যেন স্টেবল অথবা কন্ট্রোল থাকে তার জন্য ব্যবহার করা হয়। একে বাফারিং এজেন্ট ও বলে।

২২.অয়েল রিমুভার:
ফেব্রিকের গায়ে থাকা অয়েল মার্ক দুর করার জন্য ব্যবহার করা হয়।

২৩.লুবরিকেন্ট:
টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল এর ভেতরের স্টেটিক ইলেক্ট্রিসিটি দুর করার জন্য লুবরিকেন্ট ব্যবহার করা হয়।

২৪.প্রোটনিক ক্যামিকেল :
ফেব্রিকের লাইন মার্ক দুর করতে ব্যবহার করা হয়।

২৫.বায়ো-স্কাওরিং ক্যামিকেল :
মাল্টিপারপাস ট্রেটমেন্ট এর উদ্দেশে ব্যবহার করা হয় বিশেষ করে স্কাওরিং, ব্লিচিং, এনজাইম একসাথে।

২৬ এপ্রিটন:
এটি ক্যালসিয়াম অক্সাইড জাতীয় ক্যামিকেল, এটি কাপড় কে হার্ড করে।

২৭ পিভিএ গাম:
পলি ভইনাইল এলকোহল এটি একটি পলিমার , এটি ফেব্রিক কে হার্ড করে।

২৮. এলজিনেট গাম :
এটি ন্যাচারাল গাম, যা লিকার সলিউশন এর ভিসকোসিটি বাড়াতে সাহায্য করে।

Echem Vendor Registration করতে click করুন।

ক্যামিক্যাল বিক্রির নিয়ম

ধরুন আপনি উপরক্ত ক্যামিক্যাল বাহিরের দেশ থেকে আমদানি করলেন। এর জন্য আপনাকে প্রথমে আমদানি লাইসেন্স সরকারের কাছ থেকে নিতে হবে। তারপর সরকারের কাছ থেকে আপনাকে ক্যামিক্যালের গোডাউনের বিশারদ জমা দিতে হবে। যে পাত্রে ক্যামিক্যাল রাখবেন সেই পাত্রের নমুনা দেখাতে হবে। এর পর সরকার থেকে আপনাকে বিক্রির জন্য অনুমোদের নীতিমালা নিতে হবে এবং আপনাকে সেই নীতিমালা অবশ্যই পালন করতে হবে। কারন ক্যামিক্যাল এমন একটি রাসায়নিক পদার্থ যেগুলো পরিবেশের অনেক ক্ষয় ও নষ্ট করে। তাই এসব কিছু আপনাকে প্রথমে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন নিতে হবে। এতো কিছু করলেন তো এবার বিক্রি করার পালা। কোথায় বিক্রি করবেন বা কার কাছে বিক্রি করবেন সেই বিষয়ে কিছু নমুনা দেওয়া হলোঃ
১। স্পিনিং মিল – ৬৩ টির অধিক
২। ইয়ার্ণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান – ২৯২ টির অধিক
৩। ফেব্রিক্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান – ৭৪০ টির অধিক
৪। ডাইং, প্রিন্টিং ও ফিনিশিং মিল – ২৩৩ টির অধিক
৫। ফার্মাসিউটিক্যালস – ১২৫ টির অধিক
৬। ল্যাব সমৃদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয় – ১০৫ টির অধিক

ক্যামিক্যাল ব্যবসার নীতিমালা

আপনি ব্যবসা করবেন অবশ্যই ক্যামিক্যাল ব্যবসার নীতিমালা নিয়ে। আবার যারা আপনার থেকে ক্যামিক্যাল কিনবে তারাও অবশ্যই ক্যামিক্যাল ব্যবহারের নীতিমালা অনুযোগী ক্যামিক্যাল ব্যবহার করবে । তার মানে আপনি যেমন নীতিমালা অনুযায়ী ক্যামিক্যাল বিক্রি করতেছেন ঠিক তেমন আপনার কাছ থেকে যেসব কোম্পানী ক্যামিক্যাল কিনবেন তারাও সেই ক্যামিক্যাল এর ব্যবহারের সঠিক নীতিমালা অনুসরণ করে ক্যামিক্যাল ব্যবহার করবে।


ক্যামিক্যাল ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে

ক্যামিক্যাল ব্যবসা করতে কত টাকা লাগে তার সঠিক উত্তর দেওয়া সম্ভব না। কারন প্রতিদিন নতুন নতুন রাসায়নিক পদার্থ সাপ্লাই হচ্ছে। আর মার্কেটেও সেই নতুন ক্যামিক্যালের চাহিদা বাড়তেছে। তাই হিসেব মিলানো সম্ভব নয়। প্রশ্ন হতে পারে কোন দেশ দেকে ক্যামিক্যাল আমদানি করব? পৃথিবীর অনেক দেশেই ক্যামিক্যাল রপ্তানি করে। তবে সবার উপরে রয়েছে চীন, আমেরিকা, জাপান ও ভারত। এসব দেশের ক্যামিক্যালের মান অনেক ভাল হয় তাই চাহিদাও বেশি।

লেখক:আবদুল মোমিন


Recent Post